সেন একটি সমাসবদ্ধ শব্দ ।যার অর্থ রাজা,সেনাপ্রধান, সেনাই।যেমনঃউগ্র সেনা যার=উগ্রসেন, রুদ্র সেনা যার=রুদ্রসেন।Sen একটি ইন্দো-ইয়োরোপীয় শব্দমূল যা থেকে বহু গ্রীক,রোমান,ইংরেজী এবং সংস্কৃত শব্দ গঠিত হয়েছে।এই শব্দমূলের অর্থ প্রাচীন বা অভিজ্ঞ । এর থেকে গঠিত ইংরেজি শব্দ যেমন Sen+ior=Senior(অভিজ্ঞ ব্যক্তি)
Sen+ate=Senate( দলনেতা বা অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের সভা বা সংসদ)
সংস্কৃতে ‘অ’ এর উচ্চারণ নেই তাই সংস্কৃতে
সেন+আ=সেনা
সেন+আই=সেনাই (কোঙ্কনী)
- সেন্+অ = সেন(বাংলা)
গ্রীক, তুর্কী, ইরানি এবং ভারতীয়দের মধ্যে সেন পদবীটি দেখা যায়।সেন নামক স্থানের নাম সবচেয়ে বেশি ইরানে দেখা যায়।
৩২৭ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ভারতীয় উপমহাদেশে গ্রীকরা রাজ্যস্থাপন করে এবং কিছু ইন্দো-ইয়োরোপীয় বংশোউদ্ভূত কিছু রাজার মাঝে সেন উপাধি (পদবী নয়) ধারণ করতে দেখা যায়।তখনো ভারতীয়দের মাঝে পদবীর প্রচলন হয়নি।
২৩০ খ্রিষ্টাব্দে গ্রীক ব্যাকট্রিয়া রাজ্যের(আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ) টার্ক গাঞী হতে আগত বিন্ধ্যশক্তি নামে একজন ব্রাহ্মণ “বাকাটক” নামে বিন্ধ্যাচল পর্বতমালা থেকে দাক্ষিণাত্য পর্যন্ত বিস্তৃত এক সাম্রাজ্যের পত্তন ঘটান এবং তার বংশধরেরা প্রত্যেকেই “সেন” পদবী ধারণ করেন।যা ভারতীয়দের ইতিহাসে সর্বপ্রথম পদবী হিসেবে প্রতীয়মান। পূরাণে এদেরকে রাজন্যব্রাহ্মণ, ব্রহ্মক্ষত্রিয়,মূর্ধাভিষিক্ত ইত্যাদি অভিধায় ভূষিত করা হয়েছে।মূর্ধা মানে মস্তক এবং অভিষিক্ত মানে সিংহাসনে বসা। মূর্ধাভিষিক্ত এর অর্থ যারা ব্রহ্মের মস্তকের সর্বোচ্চস্থান হতে জাত এবং রাজা হয়ে সকল বর্ণের উর্ধ্বে অবস্থান করেন।অজন্তা ইলোরার গুহাগুলি এই সেন রাজাদের কীর্তি। বাকাটক রাজবংশ ২৩০-৫০০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত শাসন করে। বাকাটক রাজবংশের সমকালীন রাজবংশ হলো গুপ্ত সাম্রাজ্য। গুপ্ত রাজত্বকাল ২৭০-৪০০। সেই সময়কালীন ভারতীয় রাজনীতি এই দুই বংশের করায়ত্ত ছিল।সেন আর গুপ্ত।গুপ্ত সাম্রাজ্যের প্রভাব ছিল জ্যতিষ( বর্তমান অরুনাচল) থেকে শুরু করে প্রাগজ্যতিষ,নেপাল,মিথিলা,হিমাচল,রাজস্থান,সিন্ধু পর্যন্ত লম্বা রাজ্য।অপরদিকে বাকাটক সেন রাজবংশ ছিল মধ্যভারতের নর্মদা নদীর দক্ষিণতীর হতে দাক্ষিণাত্য পর্যন্ত বিস্তৃত ত্রিকোণাকৃতি রাজ্য।
এই দুই রাজবংশ প্রাথমিক অবস্থায় প্রতিদ্বন্দ্বী এবং শত্রু ভাবাপন্ন থাকলেও এক পর্যায়ে তারা মিত্রতা স্থাপন করে দ্বিতীয় রুদ্র সেন এর সাথে গুপ্ত রাজবংশের প্রভাবতীগুপ্তের ঐতিহাসিক বিবাহের মাধ্যমে।
বাকাটক রাজবংশ চারটি রাজধানী নিয়ে শাসিত।প্রবরপুর(কেন্দ্রীয় বাকাটক),নন্দীবর্ধন(রামটক, বর্তমান নাম রামটেক) বাকি দুটো ধারণা করা হয় কর্ণাটক ও কটক।কটক উড়িষ্যায় অবস্থিত যা বাংলার নিকটবর্তী।এই সাম্রাজ্যের পতন ঘটলে এরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্যে শাসন করতে থাকে।
চাচসেন নামক ব্রাহ্মণ সিন্ধের অলদ অঞ্চলে “চাচব্রাহ্মণ রাজবংশ” নামে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন যার স্থায়ীত্বকাল ৬৩২-৭২৪ খ্রিস্টাব্দ,চাচের পুত্র চন্দ্র সেন এবং দাহির সেন উভয়ই শাসন করেন।দাহির সেন কে মুহম্মদ বিন কাসিম পরাজিত করে পরে এটি করদ রাজ্য হিসেবে সলিল সেন শাসন করে।
৬ষ্ঠ শতাব্দীর কামরুপরাজ ভাস্করবর্মার ব্রাহ্মণ ভূমিদান তাম্রশাসনে “সেন” পদবীধারী ব্রাহ্মণদের দেখা যায়।এরপর ত্রিপুররাজ লোকনাথের ব্রাহ্মণ ভূমিদান তাম্রশাসনেও সেন দের পাওয়া যায়।এথেকে প্রতীয়মান হয় সেনরা দাক্ষিণাত্য হতে বাংলায় বসতি গড়ে।