প্রাচীন কালে কোনও পদবী হতো না। এগুলির সৃষ্টি প্রায় ৮০০ বছর আগে মাত্র।বল্লাল সেন কৌলীন্য প্রথা প্রবর্তনের মাধ্যমে পদবীর প্রচলন করেন।বাঙালিজাতির ইতিহাসে তাই সেন রাজবংশ হতে সেন পদবীই প্রথম পদবীপ্রথা হিসেবে ধরা হয়।পূর্বতন শাসক পালরা ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মমতে বিশ্বাসী সে সময়ের বাঙলায় পদবী হত না কিন্তু বাঙলায় বৈদিক গোঁড়া হিন্দু খ্যাত সেন রাজবংশ দ্বারা বাঙলা অধিকৃত হওয়ার পর ধর্মান্তরিতকরণ,বাঙলার সাতটি গ্রামে ব্রাহ্মণ অভিবাসিতকরণ এবং “বর্ণ ও কৌলিন্য” প্রথার প্রচলনের ইতিহাস পাওয়া যায়।অর্থাৎ বাঙলার বর্ণভেদের উদ্দেশ্য শুধু ধর্মীয় নয় রাজনীতি একটি বড় কারণ।যেমন রাজনৈতিক কারণে বৈশ্য বর্ণকে শুদ্রে অবনমিত করা হয় যা এখনো বাঙালি সমাজে প্রচলিত।এর পেছনের কারণ হল রাজা বল্লাল সেন যুদ্ধাভিযানের জন্য বণিকদের কাছে অর্থ দাবি করেন কিন্তু বনিকরা তা নিঃশর্তে দিতে অস্বীকৃতি জানান ফলসরূপ বণিকদেরকে কৌলিন্যচ্যুত হতে হয়।বণিকদের নেতৃত্বেে ছিলেন সুবর্ণবণিক বল্লভানন্দ যার জামাতা ছিলেন অঙ্গের রাজা।বাঙলায় “ক্ষত্রিয়” (ক+ষ+ত্রি+য়/kshtriya) এর অপভ্রংশ “কায়স্ত” রুপে বর্ণের উল্লেখ পাওয়া যায়।মিনহাজ রচিত “তবারক-ই-নাসিরি” তে লক্ষণ সেনের বংশকে খলিফার মত সম্মান করত এবং তাদের বাক্যকে ধর্মবিধান বলে হিন্দুরা স্বীকার করত বলে উল্লখ করেছেন।শিলালিপিতে তাদের বংশকে ব্রহ্মক্ষত্রিয় এবং “অদ্ভুতসাগর” গ্রন্থে বল্লাল সেনের বংশকে “কুলীন কুলশ্রেষ্ঠ” বলা আছে। তাই বাঙলার বর্ণ বিভাগ
- ব্রহ্মক্ষত্রিয়
- ব্রাহ্মণ
- কায়স্ত
- শুদ্র৷
এছাড়া বৈদ্য[৩]নামে ব্রাহ্মণ বর্ণের একটি উপবর্ণ; নমঃশুদ্র,মাহিষ্য নামে শুদ্রের উপবর্ণ বিদ্যমান।
ব্রহ্মক্ষত্রিয়
বল্লাল সেনের শাসন আমলেই কৌলীন্য প্রথার শুরু। সেন রাজাদের শিলালিপি থেকে জানা যায়, তাঁরা ছিলেন চন্দ্রবংশীয় ‘ব্রহ্মক্ষত্রিয়’ ( ব্রহ্মক্ষত্রিয় বলতে তাদেরকে বোঝানো হয় যারা ব্রাহ্মণ কুলে জন্মগ্রহন করলেও পেশা হিসেবে ব্রাহ্মণ্য পেশা গ্রহণ না করে ক্ষত্রিয়ের পেশা অর্থাৎ রাজ্য শাসন এবং যুদ্ধবিদ্যাকে পেশা হিসেবে গ্রহন করে।)। কোনো কোনো ঐতিহাসিকের মতে, সেনরা প্রথমে জৈন আচার্য বংশোদ্ভূত ছিলেন কিন্তু এই মত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।সেনরা কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তনের পর একটি বংশ থেকে আরেকটি বংশকে আলাদা করতে সনাতনীদের মাঝে পদবী প্রথার প্রচলন হয়।বল্লাল চরিত থেকে জানা যায় বল্লাল সেন প্রত্যেক ৩৬ বছর পর পর কর্মানুসারে বর্ণ পরিবর্তনের বিধান রাখেন কিন্তু লক্ষণ সেন এই পরিবর্তনে মনোনিবেশ করেননি।
উচ্চ বংশীয় পদবীসমূহ তালিকা
- সেন (কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তনকারী)[৪]
- আচার্য্য/শাস্ত্রী (এরা শাস্ত্রজ্ঞ পণ্ঠিত ও শাস্ত্র বিষয়ে পাঠ দানকারী)
- ভট্ট/ভট্টাচার্য্য( এরা ভট্টশালি গ্রামের বসবাসী ছিলেন)
- চট্ট (চট্টগ্রাম অঞ্চলের কোন এক গ্রামে এদেরকে অভিবাসন করা হয়)
- মিত্র
- উপাধ্যায়
- গোস্বামী
- গঙ্গোপাধ্যায়/গাঙ্গুলী
- চট্টোপাধ্যায়/চ্যাটার্জি
- বন্দোপাধ্যায়/ব্যানার্জি
- মুখোপাধ্যায়/মুখার্জি
- তেওয়ারি / ত্রিবেদী (পশ্চিমা)
- ভট্টনারায়ণ
- রাহা
- দেব
- রায়
- রাহুত
- মৌলিক
- মৈত্র
- শর্মা/দেবশর্মা
- ভাঁদুড়ি
- ভাওয়াল
- চক্রবর্ত্তী/চক্রবর্তী/চকোত্তি (নিম্ন শ্রেণির নাথ পূজারি ব্রাহ্মণ)
- ঘোষাল
- পিরালি ব্রাহ্মণ/ঠাকুর
- বাগচী
- সার
কায়স্থদের পদবীসমূহ
- গুপ্ত
- মিশ্র
- সিংহ
- রুদ্র
- ব্রহ্ম
- বিষ্ণু
- ইন্দ্র
- ভদ্র
- কর
- বিশ্বাস
- দে
- গুহ
- রায়
- দাশ
- নন্দী
- চন্দ
- দাস
- আইচ
- নাগ
- অধিকারী
- ভানুশালী
- আদিত্য
- ধর
- দত্ত
- রক্ষিত
- দেব
- পালিত
- সোম
- কন্ঠ
- ঘোষ
- কেওট
- সুর
- রায়
- কুরী
- মন্ডল
- ব্যাপারী
- শিকদার
- খাঁ
- বালো
- মল্লিক
- মৃধা
- তরফদার
- ভৌমিক
ভূ-স্বামীদের প্রাপ্ত পদবী
- ভৌমিক
- চাকলাদার
- তালুকদার
- রায়
- চৌধুরী
- ঠাকুর
- মণ্ডল
- প্রধান
- মল্লিক
- চৌধুরী
- দস্তিদার
- হালদার
- হাওলাদার
- খাস্তগীর
- মহলানবীশ
- মজুমদার
- জোতদার
নমঃশূদ্র বা নমঃস্বেজ
- ভক্ত
- দাস
- বাসফোর
- মল্লবর্মণ
- চন্ডাল
- মুচি
- মোদক
- শীল (নাপিত)
- হাওলাদার
- নাথ/দেবনাথ
পেশা হিসেবে প্রাপ্ত পদবী
- কানুনগো
- কারিগর
- কর্মকার
- গোঁসাই
- ত্রিবেদী
- দেওয়ান
- পালাকার
- পোদ্দার
- প্রমাণিক
- ভাঁড়
- মজুমদার
- মালাকার
- সরকার
- হাজরা
- হালদার
- অধিকারী
- বনমালী
- পাখাধরা
- কার্য্যী
- দেওরী
- পাটোয়ারি
- ডাকুয়া
- পাল
- মোদক
- বৈদ্য
অন্যান্য
- গুণ
- কুন্ডু
- গদগদ
- বালা
- জলদাস
- জলধর
- দাসগুপ্ত
- বড়াল
- সাহানী / সোহানী
- বর
- খাঁ
- রং
- সাউদ
- গায়েন
- ব্রজবাসী
- মহন্ত (শ্রীচৈতন্য মহাপ্রভু প্রচারিত বৈষ্ণব)